আপনার চেহারার লাবণ্য ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে

প্রতিদিনই মানুষের একটু একটু করে বয়স বাড়ে; বিশেষ করে ২৫ বছর বয়সের পর থেকে ত্বকে তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। তবে এটা কোনো দুঃসংবাদ নয়। পরিবর্তন এবং বিকাশ– এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তবে বেশি বয়সেও চেহারায় লাবণ্য অটুট থাকুক তা কে না চায়? বয়স বাড়তে থাকলেও একটু সচেতন হলেই চেহারার লাবণ্য ও সৌন্দর্য ধরে রাখা যায় দীর্ঘদিন। চলুন জেনে নেওয়া যাক চিরসবুজ থাকার কিছু সহজ উপায়- শুধু জীন দায়ী নয় মোটা মানুষ বা যাদের মোটা হওয়ার কারণে নানা অসুখ-বিসুখ রয়েছে, তাদের অনেককেই বলতে শোনা যায় যে জেনেটিক কারণেই নাকি তাদের এ অবস্থা। ব্যাপারটা পুরোপুরি ঠিক নয়, কারণ গবেষণায় দেখা গেছে একই পরিবারে ২ ভাই বা ২ বোনের মধ্যে খাদ্যাভাস ও লাইফ স্টাইলের কারণে তাদের শারীরিক গঠন ২ রকম হয়ে থাকে। কাজেই খাদ্যাভ্যাসে সচেতন হওয়া জরুরি। বেশি গুরুত্ব দেওয়া ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে,
বয়স বাড়া মানেই কোনো কিছু পরিত্যাগ করা নয়। তারা বলেন, বয়সের সাথে পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক, তবে তাতে সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে– এমন কোনো কথা নেই। বয়সের সাথে ত্বক পাতলা এবং শুষ্ক হয়। তাই ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে। অ্যান্টি-এজিং ক্রিম দেখতে সুন্দর হওয়া বা কমনীয় ত্বক পেতে চাইলে শুধু অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহারই কি যথেষ্ট? স্বাভাবিকভাবেই উত্তরটি হবে না। দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন শৃঙ্খলা। সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যকর খাবার, হাঁটাচলা, ব্যায়াম, ইতিবাচক চিন্তা করা, মনকে প্রফুল্ল রাখা এসব কিছুই চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর এই সব কিছুর পাশাপাশি রূপচর্চা তো রয়েছেই। কড়া রোদ থেকে দূরে ত্বকের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য সুর্যের আলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে চর্ম বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিজেকে দূরে রাখা প্রয়োজন। এতে যে ত্বক সহজে বুড়িয়ে যায় – তা নয়, এর ফলে ত্বকে ক্যানসারও হতে পারে। তাছাড়া আজকাল পরিবেশ দূষণও ত্বকে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে। তাই যতটা সম্ভব দূষণ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং বাইরে থেকে ফিরে গোসল বা ভালো করে হাত-মুখ ধোয়া উচিত। প্রাকৃতিক প্রসাধনী আগের আমলে রানী, রাজকন্যারা রূপচর্চায় প্রাকৃতিক প্রসাধনী ব্যবহার করতেন। বর্তমানেও সৌন্দর্য চর্চায় আবার সেই ট্রেন্ড ফিরে এসেছে। অর্থাৎ গাছগাছালির পাতা, রস, শেকড় ইত্যাদির তৈরি ভেষজ ক্রিম, পাউডার, তেল নানা কিছু এসে গেছে বাজারে। সৌন্দর্য পিপাসু অনেকেই আজকাল তাই সেদিকেই ঝুঁকছেন। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বলে আজকাল এসব ব্যবহার করতে রূপচর্চা বিশেষজ্ঞরাও উৎসাহিত করছেন। সৌন্দর্য চর্চায় ছেলেরা যৌবন ধরে রাখতে, সুন্দর দেখাতে আজকের যুগে নারী-পুরুষ সবাই সমান আগ্রহী। কাজেই পোশাক, চুল এবং দাড়ির স্টাইল সময়ের সাথে মিলিয়ে চলতে এবং নিজেকে তরুণ ভাবতে অনেক পুরুষই নিয়মিত বিউটি পার্লারে যাতায়াত করে থাকেন। তবে আসল তারুণ্য কিন্তু ফোটে ওঠে অন্তর থেকে। খাওয়া-দাওয়া সুস্থ আর সুন্দর থাকতে খাওয়া-দাওয়ার ভূমিকা অনেক। মানুষের শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, শর্করা, মিনারেল – এগুলির দরকার। সব কিছুই খাওয়া উচিত, তবে একটা পরিমিতিবোধ থাকতে হবে। প্রচুর শাক-সবজি, ফল-মূল খাবার তালিকায় থাকা প্রয়োজন। মুখ হচ্ছে শরীরের আয়না। অর্থাৎ শরীরের ভেতরটা ভালো থাকলে চোখে-মুখে তার প্রভাব তো পরবেই। নিয়মিত ব্যায়াম শুধু সুন্দর মুখ আর টানটান ত্বকই তারুণ্যের চাবিকাঠি নয়। শরীরটাও থাকতে হবে টানটান; আর সেজন্য চাই নিয়মিত কিছুক্ষণ শরীরচর্চা বা ব্যায়াম এবং মুক্ত বাতাস সেবন। শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকার জন্য বছরে অন্তত একবার ‘মেডিকেল চেকআপ’ করিয়ে নেওয়াও অত্যন্ত দরকারি৷ সময়ের সাথে চলা বয়স যতই হোক না কেন সময়ের সাথে কিছুটা তাল মিলিয়ে চলা বেশ প্রয়োজন। তবেই তো সমাজে সব বয়সীদের সাথে মিলেমিশে, একসঙ্গে চলা সম্ভব। নিজেকে তরুণ ভাবা এবং সব বিষয়ে আপডেট থাকা অবশ্যই এক্ষেত্রে একটা বড় ব্যাপার। গ্রিন-টি সৌন্দর্য চর্চা বা তারুণ্য ধরে রাখতে গ্রিন-টি বা সবুজ চায়ের জুড়ি নেই৷ এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট৷ নিয়মিত গ্রিন-টি পান শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, ১২ সপ্তাহ ধরে ৬০ জন মানুষকে প্রতিদিন গ্রিন-টি পান করিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়। যাতে বেরিয়ে আসা যে, তাদের চামড়া বা ত্বক আগের তুলনায় অনেক টানটান হয়েছে৷ ইতিবাচক চিন্তা যথেষ্ট ঘুম, অপ্রয়োজনীয় চাপ এড়িয়ে চলুন। অ্যালকোহল, ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দিন আর দিনে অন্তত একবার প্রাণ খুলে হাসুন। ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন। প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক রাখুন, হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে পারলে অন্যের উপকার করার চেষ্টা করুন। তবে সেজন্য চাই সুন্দর একটি মন। সুন্দর মনের অধিকারী হতে পারলে তারুণ্য যে আপনার হাতের মুঠোয়!